ধনতেরাস পুজা 2024: ইতিহাস ও তাৎপর্য | Dhanteras 2024: History and Significance

2024 ধনতেরাস পুজা: 2024 Dhanteras Puja History and Significance, 2024 ধনতেরাস লক্ষ্মী পূজার ইতিহাস ও তাৎপর্য এবং জানুন ধনতেরাস পূজা কেন পালন করা হয়? বিধি কি?

ধনতেরাস 2024 (Dhanteras 2024) শব্দটির দুটি শব্দ দ্বারা গঠিত। ধন (Dhan) এর অর্থ সম্পত্তি এবং তেরাস (Teras) কথার অর্থ হল কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশ দিনটিকে উপস্থাপন করে।

ধনতেরাসের আর এক নাম শিবচতুর্দশী। কথিত আছে যে এই দিনেই সমুদ্রমন্থনের সময় দেবী লক্ষী দুধের সমুদ্র থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন।

ধনতেরাসের ইতিহাস 2024:

পুরাণের কাহিনী অনুসারে ধন-সম্পদের দেবতা কুবের (God Kuber)। তাই এদিন কুবের ও  লক্ষ্মীর (God Kuber & Goddess Lakshmi) আরাধনাও করা হয়। পুরাণে কথিত আছে যে দুর্বাসা মুনির অভিশাপে স্বর্গ থেকে লক্ষ্মী দেবীকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

Dhanteras History and Significance
2024 ধনতেরাস পুজা: 2024 Dhanteras History and Significance

তিনি সাগরে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। এরপর রাক্ষস দের সঙ্গে লড়াই করে দেবতারা ফিরে পান তাদের লক্ষীকে। অনেকে আবার বলেন প্রাচীন রাজা হিমার ছেলের ভাগ্যে লেখা ছিলো বিয়ের পরে চতুর্থ রাতে সর্পদংশনে তার মৃত্যু হবে।

তখন সদ্য বিবাহিত স্ত্রী তার স্বামীর প্রাণ বাঁচাতে নিজের যাবতীয় গয়না অলংকার ঘরের দরজায় জড় করে রেখে দেন এবং প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখে দেন দরজায়। যম প্রবেশ করতে গেলে সোনার ছটায় তার চোখ ধাঁধিয়ে যাবে। সেই থেকে ধন-সম্পদের আরাধনা শুরু হয়।

কালীপূজার ইতিহাস ও তাৎপর্য, কখন আর কিভাবে শুরু হয়?

ভাই ফোঁটা শুরু হয় কিভাব? ভাই ফোঁটার ইতিহাস ও তাৎপর্য

ধনতেরাসের তাৎপর্য 2024:

আবার বলা হয় যে, এই দিন ধাতু কিনলে তার জৌলুশে আকৃষ্ট হয়ে মা লক্ষী নিজে আসেন সেই বাড়িতে। তাই এদিন মূল্যবান ধাতু কেনার ধুম পড়ে যায় একেবারে। সোনার রুপোর দোকানে চলে নানা আকর্ষণীয় অফার। অনেকেই সমৃদ্ধির বিশ্বাসে এদিন সোনা ও রুপোর গয়না থেকে, কয়েন বা প্রতিকি কিছু কিনে থাকেন।

অনেকে যারা দামি ধাতু কিনতে পারেন না,  তারা দামি পিতল তামার দ্রব্য কিনে থাকেন। বাড়ি বাড়ি লক্ষী দেবীর আরাধনা হয়। সবশেষে চৌদ্দটি প্রদীপ জ্বালিয়ে ঘরের অন্ধকার দূর করা হয়।

ধনতেরাসের এই দিনটি আবার ধন্বন্তরি ত্রয়োদশী (Dhanvantari Triyodashi) নামেও পরিচিত। ধন্বন্তরি হিন্দু ধর্মে বিষ্ণুর অবতার। দেবতা এবং আয়ুর্বেদিক চিকিৎসক হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন। নিজের এবং অন্যদের জন্য বিশেষত ধনতেরাসের জন্য সুস্বাস্থ্যের জন্য তারা আশীর্বাদ প্রার্থনা করে থাকেন।

2024 শুভ ধনতেরাস শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস ছবি

ধন্বন্তরি দুধের মহাসাগর থেকে উত্থিত হয়। ভাগবত পুরাণে বর্ণিত সমুদ্রের গল্প কালে অমৃতের পাত্রের সাথে উপস্থিত হয়েছিল। এটাও বিশ্বাস করা হয় যে ধন্বন্তরি আয়ুর্বেদা (Ayurveda) প্রথা চালু করেছিলেন।

ধনতেরাস মানে জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস, কেন জানেন:

কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের ত্রয়োদশ দিনে সাধারণভাবে পালিত হয় ধনতেরাস নামক এই উৎসবটি। অর্থাৎ কালী পুজোর দুদিন আগে ধনতেরাস। নতুন সোনারূপো বা অন্যান্য ধাতব বস্তু কেনাকাটা করার শুভ সময়, শুভক্ষণ এমনটাই বলছে তিথি নক্ষত্র। অনেকে আরও বড় কিছু কেনেন এদিন, যেমন গাড়ি।

আমরা সকলেই জানি ভারতের নানা অঞ্চলে ধনতেরাস পালিত হয়। মূলত ধনসম্পত্তির উৎসব হিসেবে প্রধানত উত্তর এবং পশ্চিম ভারতে ধনতেরাস মানে হল দেওয়ালির  অথবা দীপাবলীর সূচনা হয়ে যাওয়া। ঘর দোর পরিষ্কার করা, নতুন কিছু সোনাদানা, নতুন বাসন থালা কেনা।

কিন্তু ধনতেরাস মানে যে শুধুমাত্র ধনসম্পত্তি তা কিন্তু নয়, লক্ষ্মীপুজো নয়, সোনাদানা কেনা নয়, তা জানেন কেউ কি? এও কি জানেন যে, ভারত সরকারের আয়ুর্বেদ, যোগ, ন্যাচারোপ্যাথি, উনানি, সিদ্ধ এবং হোমিওপ্যাথি মন্ত্রক দিনটিকে জাতীয় আয়ুর্বেদ দিবস (National Ayurveda Day) হিসেবে পালন করে আসছে ২৮ শে অক্টোবর ২০১৬ থেকে।

এর আরেকটি কারণ হল ধনতেরাসের দিন পূজিত হতেন ধন্বন্তরি। যিনি ভারতীয় শাস্ত্র মতে আয়ুর্বেদের দেবতা। যার কল্যাণে আমরা লাভ করেছি সুপ্রাচীন এই চিকিৎসা পদ্ধতি। অতএব ধনতেরাস শব্দটির উৎস ধনসম্পত্তি নয়, ধন্বন্তরি ত্রয়োদশী।

হিন্দু পুরাণে বলে, সমুদ্রমন্থনের সময় উঠে আসেন ধন্বন্তরি। একহাতে অমৃত পূর্ণ কলস, অন্যহাতে আয়ুর্বেদের বই। পুরাণে বর্ণিত হয়েছে দেবতাদের বৈদ্য অর্থাৎ চিকিৎসক হিসেবে।

দীপাবলী কেন পালন হয়? দীপাবলীর আসল ইতিহাস ও তাৎপর্য কি?

ধনতেরাস উৎসবের উৎপত্তি:

স্বাস্থ্যের দেবতা ধন্বন্তরি (Dhanvantari) জায়গায় অধিষ্ঠিত হলেন মা লক্ষ্মী, তা জানা যায় না। কিন্তু আজও বহু বাড়িতে ঘরদোর পরিষ্কার করে সাধ্য থাকলে নতুন করে রং করে ধনতেরাসের দিন সন্ধ্যাবেলা ধন্বন্তরির পুজো করা হয়, প্রদীপ দেওয়া হয় তুলসী তলায়, বাড়ির দোরগোড়ায় যাতে যমরাজ এই উৎসবের আমেজে অকস্মাত্ বাধা না দিতে পারেন।

তবে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে দীপাবলি উৎসবের আনন্দে ধনতেরাসের দিন লক্ষ্মীরই পুজো করা হয়। বাড়ির প্রধান প্রবেশপথ সাজানো হয় আলো দিয়ে, আলপনা, রংগোলি দিয়ে, রাতে সারারাত ধরে জলে প্রদীপ, আলো, মিষ্টিমুখ, উৎসবের মধ্যে দিয়ে স্বাগত জানানো হয় ধন-সম্পদের দেবী লক্ষ্মী কে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তৈরি হয় বিভিন্ন প্রকারের নৈবেদ্য।

নতুন কিছু কিনতে হলে বিশেষ করে সোনা রূপো বাসন বা অন্য কোন ধাতু এর চেয়ে ভালো দিন আর নেই। এমনই বিশ্বাস হিন্দুদের মধ্যে, অর্থাৎ নতুন ধন হয়ে ওঠে সৌভাগ্যের প্রতীক। তবে এটা কতটা বাস্তবে বাস্তবিক রূপ নেয়, তা সঠিক করে বলা যাবে না।

ধনতেরাস উৎসবের গুরুত্ব:

পুরাণের কাহিনী অনুসারে স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য  ধন্বন্তরির  উপাসনা করা হয় এদিন ।সমৃদ্ধির জন্য কুবেরেরও পুজো করা হয়।

পৌরাণিক ধারণা অনুযায়ী ধনতেরাসের দিনে বিধি মেনে পুজো করলে ও প্রদীপ দান করলে অকাল মৃত্যুর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ধনতেরাসের পৌরাণিক গল্প:

একসময় বিষ্ণু মৃত্যু লোকে বিচরণ করতে এলে লক্ষ্মী ও তার সঙ্গে যান। তখন বিষ্ণু বলেন তার কথা মেনে চললে মা লক্ষ্মী তার সঙ্গে যেতে পারেন। তার কথা মান্য করে মা লক্ষ্মী বিষ্ণুর সঙ্গে পৃথিবীতে আসেন। একটি জায়গায় এসে বিষ্ণু মা লক্ষীকে অপেক্ষা করতে বলেন।

বলেন যে, তিনি দক্ষিণ দিকে যাচ্ছেন এবং তার না আসা পর্যন্ত লক্ষ্মী যেন সেখান থেকে কোথাও না যায়। লক্ষ্মীর মনে দক্ষিণ দিকে বিষ্ণুর যাওয়ার কারণ জানার কৌতুহল জেগে ওঠে। এরপর তিনি বিষ্ণুর পিছু নেন। কিছু দূর এগোনোর পর সর্ষের ক্ষেতে ফুল ফুটে থাকতে দেখে সেই ফুল দিয়ে লক্ষ্মী নিজেকে সাজানোর জন্য সেই দিকে অগ্রসর হন।

কিছুদূর যাওয়ার পর আখের ক্ষেত থেকে আখ তুলে তার রস পান করেন। সেই সময় বিষ্ণু সেখানে আসেন এবং  লক্ষ্মী কে  দেখে ভীষণ রেগে যান। এরপর বিষ্ণু মা লক্ষ্মী কে অভিশাপ দেন, বলেন যে বারণ সত্বেও লক্ষ্মী তার পিছু নেন ও দরিদ্র কৃষকের ক্ষেত থেকে চুরির অপবাদ করে বসেন।

লক্ষ্মী কে ১২ বছর পর্যন্ত কৃষকের সেবা করতে বলে ক্ষির সাগরের উদ্দেশ্যে প্রস্থান করেন বিষ্ণু। সেই কৃষকের বাড়িতে কৃষকের স্ত্রীকে স্নান করে লক্ষ্মীপুজো ও তারপর রান্না করার কথা বলেন। পুজোর পর কৃষক এর স্ত্রীর সমস্ত মনস্কামনা পূর্ণ হয়ে যায়। ফলে দ্বিতীয় দিন থেকেই কৃষকের ঘর অন্ন, বস্ত্র, রত্ন, তে ভরে ভরে যায়।

এভাবে বারো বছর পর্যন্ত খুব আনন্দে কাটে কৃষকের। সময় ১২ বছর পর বিষ্ণু লক্ষীকে নিতে এলে কৃষকের স্ত্রী তাকে যেতে দেন না। তখন বৃষ্ণু জানান লক্ষ্মী কে কেউ যেতে দিতে চায় না। লক্ষ্মী চঞ্চলা, কোথাও টিকতে পারেন না। তখন লক্ষ্মী কৃষককে জানান তার কথা মত চললে পরিবারে কখনো অর্থাভাব থাকবেনা।

ধনতেরাসের দিনে ঘরবাড়ি পরিষ্কার করার কথা বলেন লক্ষ্মী, এরপর রাতে ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে রেখে সন্ধ্যাকালে পুজো করতে বলেন কৃষক কে, বলেন একটি রূপোর ঘটে তার জন্য টাকা ভরে রাখতে। তিনি সেই ঘরে অবস্থান করবেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top