খেজুর একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিগুনে ভরপুর একটি ফল। আমরা জানি, খেজুর আমাদের দেশীয় ফল না। এটি আসলে গ্রীষ্মপ্রধান দেশে ভালো জন্মে। খেজুরের রস থেকে আবার গুড়ও তৈরি করা হয়। এ ফল শরীরের জন্য বেশ উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে ক্যালোরি, ক্যালসিয়াম, নিকোটিনিক অ্যাসিড, পটাসিয়াম ও আয়রন।
সারা ভারত সহ পশ্চিমবঙ্গেও খেজুরের চাষ হচ্ছে। আমাদের দেশের রাজস্থান, গুজরাট, কেরলা ও তামিলনাড়ুতে প্রচুর পরিমানে খেজুরের চাষ হয়ে থাকে। আর পশ্চিমবঙ্গে মুর্শিদাবাদ ও বীরভ’মে সৌদি খেজুরের চাষ হয়ে থাকে। এখানে খেজুরের চাহিদা অনুসারে বাজার মূল্য বেশ ভালো ।
আমরা আমাদের বাংলাভূমি ওয়েব সাইটে নিয়মিত, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এতে করে আপনারা কৃষি, শিক্ষা, অর্থনীতি আরও নানা বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। আমাদের এ তথ্যগুলো আপনারা আপনাদের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করে উপকৃত হয়ে থাকেন ।
সেই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা খেজুর চাষ নিয়ে আলোচনা করবো। আশা করছি খুব সহজেই খেজুর চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন। আসুন এবারে আমরা জেনে নেই সুস্বাদু এ ফলটির চাষ পদ্ধতি
-
-
যে কোন লোনের জন্য আবেদন করুন অনলাইনে 👇
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন -
দারুচিনি চাষের পদ্ধতি, সঠিক ও সরল
-
-
চারা তৈরিকরণ পদ্ধতিঃ
খেজুরের চারা ৩ ভাবে উৎপাদন করা যায় ১. বীজ থেকে জার্মিনেশন পদ্ধতিতে, ২. সাকার পদ্ধতিতে , ৩. অফ সোড পদ্ধতিতে। তবে যদি কোন কৃষক বাণিজ্যিকভাবে চাষ করেন তাহলে সাকার পদ্ধতীতে চাষ করাই শ্রেয়। চারা রোপণ কারার আগে মাটি তৈরি করে নিতে হবে।
চারাগুলো প্রথমে ছোট জায়গায় রোপণ করতে হবে যেমন পলিব্যাগ বা পটজাতীয় জায়গায়। চারা তৈরী হয়ে গেলে প্রায় ১- ১.৫ বছর পর যথাস্থানে রোপণ করতে হবে। খেজুরের চারা সাধারনত বর্ষাকালে রোপণ করলে ভালো। অন্য সিজনেও লাগানো যায়। খেজুর বিভিন্ন জাতের হয়ে থাকে।
খেজুরের বিভিন্ন জাতঃ
খেজুরের অনেক জাত আছে, তারমাঝে আমাদের দেশে আজোয়া, আম্বার, সুকারি, মরিয়ম, ম্যাক্সোল, খালাস, সাফি ইত্যাদি জাত গুলোর চাষ হয়ে থাকে তবে কলমি চারাগুলোর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে সাধারনত সৌদি খেজুরের চাষই বেশি হয়ে থাকে। এখানকার আবহাওয়া অনুযায়ী এ জাতগুলোই ভাল জন্মে ।
আসুন এবারে জেনে নেই কিভাবে এর বেড তৈরী করবোঃ
খেজুর গাছ জৈবসার বেশ পছন্দ করে তাই গর্ত তৈরীর পূর্বে বাগানে ৪০-৫০ কেজি কেঁচো সার দিয়ে নিলে ভাল ফলন পাওয়া যাবে।
চারা রোপনের পূর্বে যথাস্থানে ৩ ফুট গভীর গর্তে ২ ভাগ বালু মাটি, ১ ভাগ কম্পোস্ট বা পুরোনো গোঁবর সার এবং ১ মুঠো চুন, দানাদার বিষ, হরমোন মিশিয়ে মাটি তৈরি করতে হবে। সাথে রাসায়নিক সার হিসেবে ইউরিয়া ৩০০ গ্রাম, ডিএসপি ৪০০ গ্রাম, এনওপি ৫০০ গ্রাম দিতে হবে। এছাড়া জিঙ্ক সালফেট, ম্যাক্স সালফেট, বোরন ও লৌহ জাতীয় সার প্রতি গর্তে ১০০ গ্রাম করে দিতে হবে।
মাটিতে জল দিয়ে ২ সপ্তাহ ফেলে রাখার পর এতে চারা রোপণ করতে হবে। চারা মাটিতে বসে গেলে সুরক্ষার জন্য বাঁশের বেড়া দিয়ে দিতে হবে এবং কোন ভাবেই যেন জল না জমে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আরও ভাল হবে যদি গাছের ২ ফুট দূরত্বে নালা কেটে দেয়া হয়। এতে করে গাছের গোঁড়ায় জল জমবে না, আবার ঘনঘন জল সেচও দিতে হবে না।
এবারে জেনে নেব সার প্রয়োগ ও পরিচর্যা পদ্ধতিঃ
এ গাছে বছরের ৪ বারের মতো সার প্রয়োগ করতে হয়। এতে গাছের ফলন বাড়ে। এছাড়াও গাছের বয়স অনুযায়ী বছরে একবার করে ১০০/২০০ গ্রাম অনুখাদ্য দিতে হবে ।
পরাগায়ন বা প্রজননতন্ত্রঃ
এ জাতীয় খেজুর বাগানে প্রতি ১০ টি ফিমেল গাছের সাথে একটি অথবা দুটি মেল গাছ রোপণ করতে হবে । ফেব্রুয়ারি -মার্চের দিকে যখন গাছে ফুল আসে তখন পরাগায়ন করে দিতে হয়, হাতের সাহায্যে বা ব্রাশ দিয়ে ।
মনে রাখতে হবে মেল ও ফিমেল গাছে একই সাথে ফুল আসে না। মেল গাছে ১ মাস আগে ফুল আসে । তাই পরাগায়নের জন্য পরাগরেণু সংরক্ষন করে রাখতে হবে। এ পরাগ রেণু ফ্রীজেও সংরক্ষন করে রাখা যায়। ১ বছর পর্যন্ত হাতে বা ব্রাশের মাধ্যমে পরাগায়ন হলে ফলন অনেকাংশে বেড়ে যায়। তাই খামারিরা সাধারণত ব্রাশের মাধ্যমে পরাগায়ন করে থাকেন।
তারপর গাছে ফল আসা শুরু করলে ফলের কাঁদিগুলো বাঁশ দিয়ে উঁচু ডালের সাথে বেঁধে দিতে হয় । আর ফল পাঁকার সময় হলে গাছে মশারি বা নেট দিয়ে দিতে হবে ফল গুলো যেনো নিচে পড়ে না যায়। আবার পাখিও যেনো নষ্ট না করে। খেজুর ফল অনেকদিন পর্যন্ত ঘরে রাখা যায়।
প্রাপ্ত বয়স্ক একটি খেজুর গাছ থেকে, সঠিক পরিচর্যার মাধ্যমে বছরে প্রায় ৭০-১৫০ কেজি পর্যন্ত ফল পাওয়া সম্ভব। আর গাছের গোঁড়া থেকে যে সকল ছোট ছোট চারা বের হয় সে-সব চারাও অনেক দামে বাজারে বিক্রি হয়। এ ধরনের কলমি চারার বাজার মূল্য প্রায় ৮,০০০ থেকে ১০,০০০ টাকা পর্যনত হয়ে থাকে। তাই খামারি দু-ভাবেই লাভবান হয়ে থাকে।
যেহেতু খেজুর একটি বেশ লাভবান এবং বহুমূল্য বানিজ্যিক ফসল, তাই খরচ প্রথমে একটু বেশি হলেও তা গাছে ফল আসার সাথে সাথে তা পুষিয়ে যায়। আর এ ফল চাষের বেলায় যে বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে, তা হল সফল খামারির কাছ থেকে চারা সংগ্রহ করতে হবে, এবং সমস্যায় পড়লে তার অভিজ্ঞতার আলোকে সমস্যার সমাধান করতে হবে। এছাড়া স্থানীয় জেলা কৃষি কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করেও সমস্যার সমাধান করতে পারবে।
আজ আমরা খেজুর চাষ নিয়ে আলোচনা করলাম। আগামীতে খেজুরের বানিজ্যিক সফলতা নিয়ে আরও আলোচনা করবো ।
আমদের এ লিখাটি আপনাদের সহ, আরও অনেকের কাজে লাগতে পারে তাই লিখাটি শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। আপনার একটি শেয়ারের মাধ্যমে, যদি কেউ অনুপ্রানিত হয়ে এ চাষে আগ্রহী হয়, আর লাভবান হয়ে আয়ের ব্যাবস্থা করতে পারে, তবেই এ লেখায় স্বার্থকতা আসবে।
আমাদের লেখা ভালোলেগে থাকলে যেকোন মন্তব্য আমাদের ফেসবুকে জানাতে পারেন।
আমরা আপনার মতামতের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে থাকবো ।