রাগের বশে নিজের যে চরম ক্ষতিগুলো করছেন

রাগ একটি সাধারণ অনুভূতি। মানুষের আবেগের মধ্যে রাগ অন্যতম। কিন্তু আমাদের কারো কারো রাগের মাত্রা অন্যদের চেয়ে বেশী। আবার কারো কারো কথায় কথায় রেগে যাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। রাগ সেটা প্রতি কথাতেই হোক, বা মাঝে মাঝেই হোক, সবসময়ই ক্ষতিকর।

আপনি হয়ত ভাবছেন, যে রাগ তো আর এমনিতে হয়না, রাগের মত কারণ ঘটলেই রাগ হয়। কিন্তু রাগ করলে কিন্ত সমস্যার সমাধান হয়না। মনে করুন, আপনার বন্ধুর দেখা করতে আসার কথা বিকাল ৪ টায়, কিন্তু সে আসল ৫ টার পর। আপনি রাগ করে তার সাথে কোথাও গেলেন না, আর কথাও বললেন না। এতে করে কিন্তু কোন সমাধান হল না। আপনাদের সুন্দর সময় নষ্ট হল, এবং সম্পর্কের অবনতি ঘটল।

তার চেয়ে আপনি যদি ঠান্ডা মাথায় জানতে চাইতেন, কেন দেরী হয়েছে তাহলে উত্তরটা পেয়ে যেতেন। সম্পর্কও খারাপ হতনা। রাগ করায় ক্ষতির পরিমাণ বুঝতে পারছেন?

সুপ্রিয় পাঠক, আজ আমরা রাগ করায় আপনার যে চরম ক্ষতিগুলো হচ্ছে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা করব। চলুন দেরী না করে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

রাগের বশে আপনার নিজের যে চরম ক্ষতিগুলো করছেন

১. রক্তচাপ বৃদ্ধি

রাগ মানুষের হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হ্রাস করে। অতিরিক্ত রাগে হৃদযন্ত্রের রক্তনালীতে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

যেসব ব্যক্তি হৃদরোগে ভুগছেন বা হার্ট অ্যাটাক হয়েছে যাদের  তাদের প্রায় সবাই ই আক্রান্ত হওয়ার আগে রাগান্বিত ছিলেন। অতিরিক্ত রাগে হৃদযন্ত্রে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই অতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রন করুন।

নিয়ন্ত্রণ মানেই যে রাগ চেপে রাখবেন তা নয়। রাগ কৌশলে প্রকাশ করুন, বা নিজেকে কিছুটা শান্ত করে নিয়ে ঠান্ডা মাথায় রাগের কারণ প্রকাশ করুন।

২. সম্পর্ক নষ্ট

রাগের বশেই অধিকাংশ সম্পর্ক নষ্ট হয়। কারো উপর রাগ হলে আমরা চেচিয়ে কৈফিয়ত চাই, কখনো তাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিজেদের যা মুখে আসে তাই বলে আমরা তাদের অপমান করে থাকি।

রাগে অন্ধ হয়ে আমরা আসল কারণ অনুসন্ধান করিনা। কিন্তু রাগ দমন করে যদি আমরা কারো কাছ থেকে তার আচরণের সঠিক কারণ জানতে চাই, তাহলেই আমরা সঠিক কারণটা জানতে পারব, এবং আমাদের সম্পর্কও খারাপ হবেনা।

কিছু কিছু সম্পর্ক যা রাগের কারণে একবার ভেঙে যায়, তা আর কখনোই জোড়া লাগে না।

৩. কর্মক্ষেত্রে সমস্যা

যারা কর্মক্ষেত্রে আছেন, সেখানে তাদের সবসময়ই কিছু নিয়ম-নীতি অনুসরণ করে চলতে হয়। সেখানে উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অধঃস্থনদের উপর নানা বিধি নিষেধ আরোপ করে থাকে। কখনো কখনো শাসনের মাত্রা ছাড়িয়ে সেটা অত্যাচার মনে হতে পারে।

আর এই সময়ে যদি রেগে গিয়ে নিজের রাগ প্রকাশ করে ফেলেন তাহলেই সমস্যায় পড়ে যাবেন। সেখানে জব করা বা কর্মক্ষেত্রে টিকে থাকা আপনার পক্ষে আর সম্ভব হবেনা।

আর এই রেকর্ড থাকলে অন্য জায়গায় জব পেতে এবং কাজ করতে পরবর্তীতে সমস্যা হতে পারে। তাই কর্মক্ষেত্রে রাগ নিয়ন্ত্রণ করুন।

৪. কাজের গতি হ্রাস

রাগের বশে মানুষের চিন্তা ও আবেগের যে পরিবর্তন ঘটে তাতে তার যেকোন কাজের গতি হ্রাস পায়। মনে করুন ৪ দিন পর আপনার ফাইনাল পরীক্ষা, বা পরশু আপনার অফিসে একটি প্রোজেক্ট এর কাজ সাবমিট করতে হবে, তার দুদিন আগে রেগে গিয়ে সারাদিন কোন কাজ করতে পারেন নি।

এক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন কে হল? আপনি হলেন। রাগ এখানে আপনার জন্য কোন সুফল বয়ে আনেনি। আপনি যদি রাগ কৌশলে প্রকাশ করে নিজেকে শান্ত করতে পারতেন তাহলে কাজের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব পড়ত না।

৫. অনুশোচনা বৃদ্ধি

রাগের মাথায় আমরা এমন সব কথা বলি, বা অনুভূতি প্রকাশ করে থাকি, যা স্বাভাবিকভাবে আমরা চিন্তাও করিনা। হয়ত রাগের মাথায় আপনি কাউকে অপদার্থ, কোন কাজের নয় বলছেন, খুন করতে চাইছেন, কিন্তু ঠান্ডা মাথায় এমন কোন কাজই করতেন না।

কিন্তু রাগের মাথায় কথাগুলো আপনার কাছে যৌক্তিক মনে হচ্ছে। এতে করে পরে যখন রাগ ঠান্ডা হবে, তখন আপনি তীব্র অনুশোচনায় ভুগবেন, অনেক সময় নিজের ইগোর জন্য বা অন্য কারণে অনুশোচনা প্রকাশ করার কোন সুযোগই হয়ত আপনি আর পাবেন না।

৬. অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা

রাগে মানুষের যখন কান্ডজ্ঞান লোপ পেয়ে যায়, তখন সে যেকোন কাজ করতে পিছপা হয়না। অনেক সময় রাগের বশে অন্যের ক্ষতি, ডিভোর্স, জখম, খুন পর্যায়ের ঘটনা ঘটে থাকে। যা কিনা মাথা একটু ঠান্ডা রাখলেই ঘটত না।

তাই রাগ শুধু শারীরিক বা সামাজিক ক্ষতি নয়, জীবন ধ্বংসকারী ঘটনা ঘটাতে পারে।

উপসংহার

রাগের অপকারিতা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। রাগ মানুষের স্বাভাবিক বুদ্ধি নষ্ট করে, পরিস্থিতি এবং অবস্থান বিবেচনার মানসিকতা ধ্বংস করে দেয়। রাগ আপনার অপরিসীম ক্ষতি করে থাকে, যার ক্ষতিপূরণ করা আর কখনোই সম্ভব হয়না।

তাই রাগের ক্ষতিকর বিষয়গুলো মাথায় রেখে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। রাগের প্রকাশ করা উচিত ঠান্ডা মাথায়, পরিশীলিতভাবে। আশা করি পোস্টটি রাগের বশে কি কি ক্ষতি করছেন নিজের তা জানতে আপনাকে সাহায্য করবে।

এ বিষয়ে কোন মতামত বা প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্ট করতে পারেন। আমরা অবশ্যই তথ্য জানিয়ে আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব। আজকের মত এখানেই শেষ করছি। ধন্যবাদ সবাইকে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top