2-18 বছরের বাচ্চাদের করোনা ভ্যাকসিন কিভাবে লাগাবেন? জানুন

Covid Vaccine for Children: করোনা পরিস্থিতিতে একেবারে নাজেহাল অবস্থা। বিশেষ করে যারা বাচ্চা। কারনটা হল ১৮ বছরের উর্ধ্বে সকলের টিকা করন প্রক্রিয়া শুরু হলেও শিশুদের টিকা করন প্রক্রিয়া কিন্তু চালু হয়নি এতদিন। সেই কারণে করোনা তৃতীয় ঢেউ শিশুদেরকে বেশি হারে সংক্রমিত করতে পারে, সেই চিন্তা সকলকে অস্থির করে রেখেছিল। তবে অপেক্ষার অবসান হয়েছে।

এবারের ২ থেকে ১৮ বছরের শিশুদের জন্য ভারত বায়োটেক এর করোনা ভ্যাকসিন (Covid Vaccine) এর আপৎকালীন ব্যবহারের ছাড়পত্র দিল কোভিড -১৯ সংক্রান্ত সাবজেক্ট এক্সপার্ট কমিটি। ১৮ বছরের কম বয়সের শিশুদের ক্ষেত্রে তাদের দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ সম্পূর্ণ করেছে।

গত সেপ্টেম্বরে এই ট্রায়াল’ পর্ব সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া চলতি মাসের শুরুতেই ট্রায়াল’ সংক্রান্ত তথ্য ড্রাগস এন্ড কন্ট্রোলার জেনারেল (Drugs and Controller General) এর কাছে জমা দিয়েছিল ভারত বায়োটেক (Bharat Biotech)। তবে এর পরিপ্রেক্ষিতে ২ থেকে ১৮ বছরের শিশুদের কোন ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে ছাড়পত্র সংক্রান্ত সুপারিশ এক্সপার্ট কমিটি ডিসিজিআইয়ের কাছে পাঠিয়েছে।

Covid Vaccine for Children 2-18 Years Old in India
Covid Vaccine for Children 2-18 Years Old in India

ভারতে প্রথম শিশু-কিশোরদের জন্য করোনা টিকার জন্য ছাড়পত্র দিল এক্সপার্ট কমিটি। সাবজেক্ট এক্সপার্ট কমিটি জানিয়েছে বিস্তারিত পর্যালোচনা এরপর কমিটির ২ থেকে ১৮ বছর বয়সের শিশু ও কিশোর কিশোরীদের জন্য আপৎকালীন পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের জন্য কমিটি ওই ভ্যাকসিনের ছাড়পত্র অনুমোদন সংক্রান্ত সুপারিশ করেছে।

সূত্রের খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, রোগ প্রতিরোধ সিস্টেম এই ভ্যাকসিন করে তুলবে এবং পরীক্ষায় এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখতে পাওয়া যায়নি। তাছাড়া উল্লেখ্য যে, করোনার কারণে শিশু-কিশোররা দীর্ঘদিন স্কুলে যেতে পারছেনা।

এক্ষেত্রে অনলাইন ক্লাসই ভরসা তাদের। আর এর কারণে তাদের চোখের উপর চাপ সহ নানা রকম সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে, আর এক্সপোর্ট কমিটির সুপারিশে শিশুদের করোনা টিকা করনের পথ প্রশস্ত হলো।

বাচ্চাদের করোনা ভ্যাকসিন শুরু

ভারতে তৈরি ভ্যাকসিন এর দুটি ডোজ প্রয়োগ করা হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজের ব্যবধান থাকবে কুড়ি দিন। এর আগেও মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানি ফাইজার ৫ থেকে ১১ বছরের শিশুদের জন্য করোনা ভ্যাকসিনের আপৎকালীন ব্যবহারের জন্য আমেরিকার ওষুধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (Food and Drug Administration) এর ছাড়পত্র চেয়েছিল। ছাড়পত্র পেল আমেরিকার প্রায়  ২.৮০  কোটি শিশুর করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা কবচ পাবে, জানিয়েছে তাদের পক্ষে থেকে এফডিএকে। তাদের পক্ষ থেকে ডেট দেওয়া হয়েছে।

বাচ্চাদের করোনা ভ্যাক্সিনেশনের জন্য রেজিস্ট্রেশন কিভাবে করবেন?

কোভিড ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট ডাউনলোড করার পদ্ধতি

কোভিড ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট কিভাবে ভেরিফিকেশন করবেন?

সকলের জন্য করোনা ভ্যাক্সিনেশনের রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি (অনলাইন)

পাটনার এইমস হাসপাতাল কোভ্যাকসিনের শিশুদের জন্য ট্রায়াল’ শুরু করা হয়েছে। পাটনার এইমসের সুপার সিএম সিং জানান ৭০ থেকে ৮০ জন কিশোরকে ট্রায়ালের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে।

প্রত্যেকের ট্রায়ালের আগে rt-pcr টেস্ট করা হয়েছে। রিপোর্ট নেগেটিভ এলে তবেই তারা ট্রায়ালে অংশ নিতে পারবে। এমনকি যদি তারা আগে করোনা আক্রান্ত হয় তবুও এই ট্রায়ালে অংশ নিতে পারবে না।

করোনা পর্যালোচনায় সেই বৈঠকেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জেলাশাসক দের নির্দেশ দেন যে, করোনায় আক্রান্ত শিশু ও তরুণদের সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।

একই সঙ্গে করোনা টিকার অপচয় যাতে না হয় তার জন্যও জেলা শাসকদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। বলেছেন ভাইরাসটি রূপান্তরিত হওয়ার কারণে তরুণ ও শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে খুবই দ্রুত, রীতিমতো উদ্বেগের বিষয়।

সেই কারণেই জেলার সমস্ত শিশু-কিশোরদের মধ্যে করোনা সংক্রমনের যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। একই সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে তা আবার পর্যালোচনাও করতে হবে। তেমনি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।

মহারাষ্ট্র, কেরল, উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ সহ ভার্চুয়াল বৈঠক করেন কোন তরঙ্গ মোকাবিলায় নিয়েও আলোচনা করেন তিনি। এদিনের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গোটা দেশেই ভ্যাকসিন সরবরাহ বাড়ানোর চেষ্টা চলছে বলে জানান।

করোনা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। শিশুদের দিন কয়েক আগেই এর রিপোর্ট পেশ করে জানানো হয়েছে এসবিআই ইকোব্যাপ। সংস্থাটির তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে ৯৮ দিন ধরে চলবে করুনার তৃতীয় তরঙ্গ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা।

যেমনটা দেখা গিয়েছিল দ্বিতীয় ঢেউ এর ক্ষেত্রে। প্রথম ঢেউতে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার খবর সেভাবে মেলেনি। দ্বিতীয় ঢেউ থেকে শুরু হয়েছে। আর সেই কারণেই শিশুদের টিকাকরণ (Covid Vaccine for Children) নিয়ে প্রচেষ্টা চলছে অনেক দিন থেকে।

শিশুদের টিকা দিতে হবে যে কারণে:

আগে মনে করা হতো যে, শিশুর করোনা সংক্রমণে জটিলতার ঝুঁকি কম। কিন্তু বিজ্ঞানীদের ধারণা শিশুদের মধ্যেও করোনা সংক্রমনের জটিলতা দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে করোনার নতুন ধরনগুলো শিশুদের আক্রান্তের হার তুলনামূলকভাবে বেশি।

তাছাড়া শিশুরা বড়দের মতোই সংক্রমণ ছড়ায়। কাজেই তাদের টিকার আওতায় না এনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।

আবার বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ও দীর্ঘমেয়াদি রোগ আক্রান্ত শিশুদের করোনা সংক্রমনের জটিলতার ঝুঁকি বেশি। এসব কারণ বিবেচনার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ প্যানেল শিশুদের করোনা টিকা আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছে।

শিশুদের জন্য নিরাপদ কোন করোনা টিকা:

এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ফাইজার ও জার্মানির জৈব প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বায়োটেকের যৌথভাবে উদ্ভাবিত টিকা যুক্তরাষ্ট্রের ১২ বছর ও তার বেশি বয়সীদের জরুরী ভিত্তিতে প্রয়োগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।

সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের আরেক প্রতিষ্ঠান ফাইজার, মডার্নর টিকাও শিশুদের প্রয়োগের অনুমতি পেয়েছে। তাছাড়া এই দুটি টিকা আরো কম বয়সী শিশুর উপর প্রয়োগের জন্য পরীক্ষা চলছে। এছাড়া চীনের সিনভ্যাক ও সিনোফার্মের টিকা ও শিশুদের ওপর প্রয়োগ এর বিশেষ পরীক্ষা চলছে।

শিশুদের টিকা করন এর পর বিশেষ কিছু তথ্য:

টিকাকরণ করানোর পর প্রতিটি শরীরে কিছু না কিছু স্বল্প পরিমাণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। বড়দের মতো শিশুদেরও করোনার টিকা দেওয়ার পর টিকাকেন্দ্রে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।

এর আগে শিশুকে টিকা সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। যাতে সে টিকা নিতে ভয় না পায়। শিশুদের ক্ষেত্রে টিকা দেওয়ার ফলে যে মৃদু উপসর্গগুলো দেখা দেয় সেগুলো হলো- টিকা নেওয়ার স্থানে ব্যথা অনুভব হওয়া, অথবা লাল হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া, অন্যকিছু প্রতিক্রিয়া হলো- ক্লান্তি ভাব, দুর্বলতা, হাত পা শরীর ব্যথা হয়ে যাওয়া, মাথা ব্যাথা করা ইত্যাদি।

এসব প্রতিক্রিয়া এক থেকে তিন দিন স্থায়ী হতে পারে। ব্যথা উপশমে চিকিৎসকের পরামর্শে ব্যথা কমানোর ওষুধ অথবা পেইনকিলার খাওয়ানো যেতে পারে।

বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ও রোগাকন্ত শিশুদের অগ্রধিকার:

ক্রনিক, এজমা, ডায়াবেটিস, জন্মগত হৃদরোগ, থালাসেমিয়া, ইত্যাদির মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগে আক্রান্ত শিশুরা করোনায় আক্রান্ত হলে জটিলতার ঝুঁকি বেশি অর্থাৎ নানারকম সমস্যা দেখা দিতে পারে। এসব ঝুঁকিপূর্ণ শিশুকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত টিকাকরণ করানো উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top