2023 কফি চাষের সঠিক ও সরল পদ্ধতি | 2023 Coffee Cultivation Method in Bangla

কফি বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় পানীয় গুলোর মধ্যে একটি। সকল কোমল পানীয়র মধ্যে চায়ের পরেই এর স্থান এবং মজার ব্যাপার হল এই কফি বিশ্বে সব চাইতে বেশি বিক্রিত পন্য (জ্বালানী তেলের পর)।

তাই আমাদের দেশে এর বানিজ্যিক চাহিদা ব্যপক। বিশ্ব বাজারে যেহেতু ব্যাপক ভাবে চাহিদা সম্পন্ন একটি পন্য তাই এর চাষাবাদেও রয়েছে অপার সম্ভাবনা।

Coffee Cultivation Method in Bangla
Coffee Cultivation Method in Bangla

আজ আমরা আপনাদের সাথে কফি চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই কফি চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।

চলুন দেখে নেই কফি চাষের বিস্তারিতঃ

প্রায় ৫ ধরনের কফি উৎপাদিত হয়ে থাকে আমাদের দেশে যেমনঃ

১. কুর্গ এ্যারাবিকা কফিঃ এ কফি কর্ণাটকের কোরাগু জেলায় বিশেষভাবে উৎপন্ন করা হয়।

২. ওয়েনার রোবাস্টা- এ জাতের কফি কেরেলার ওয়েনাড় জেলার পূর্বাঞ্চলে চাষ করা হয়।

৩. চিকমালাগুর এ্যারাবিকাঃ সাওথের মালভূমি কর্ণাটকের মালনাড় এলাকায় এর চাষ হয়।

৪. আরাকু ভ্যালি এ্যারাবিকাঃ অন্ধ্রপ্র্রদেশের বিশাখাপাত্তম এবং ওড়ীশার পার্বত্য এলাকায়ও এর চাষ হয়। তবে এ এলাকার উপজাতি গোষ্ঠীগুলো সম্পূর্ন জৈব পদ্ধতিতে এর চাষ করে থাকে।

৫.বসবসবুদানগিরিজ এ্যারাবিকাঃ চিকমালাগুর জেলার মধ্যাঞ্চলে এই কফি উৎপাদিত হয়। এই কফির মধ্যে চকোলেটের গন্ধ বিদ্যমান। সম্পূর্ন প্রাকৃতিক ভাবে জারিত করে এ কফি উৎপাদিত করা হয়। ইত্যাদি জাত গুলোর চাষ বেশি হয়ে থাকে।

ভারতে ৩.৬৬ লাখ কফি চাষী রয়েছে তারা প্রায় ৪.৫৪ লাখ হেক্টর জমিতে কফির চাষ করে থাকেন। এর মধ্যে কর্নাটকে ৫৪%, কেরেলাতে ১৯%, তামিলনাড়ুতে ৮%, উত্তর- পূর্ব ভারতে ১.৮% এবং অন্ধ্রপ্রদেশে ও ওড়িশায় ১৭.২% কফি চাষ হয়ে থাকে। অনেক জায়গায় কফি উৎপাদিত হয়ে থাকে।

কফির যেমন পুষ্টিগুন রয়েছে তেমনি ভেজজ গুনও রয়েছে। বর্তমানে এটি সৌন্দর্য উপাদানেও ব্যবহার হয়ে থাকে। আসুন আজ আমরা জেনে নি এই স্বাদ ও সুগন্ধিযুক্ত ফলটির চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে

কফির জাতঃ

বিশ্বে প্রায় ৬০ টিরও বেশি জাত আছে কিন্তু সবচেয়ে চাহিদা স¤পন্ন জাত ফচ্ছে চিরহরিৎ বা গ্রীন কফি, আমদের দেশে সাধারণত ২ জাতের কফি বেশি দেখা যায় ১. এ্যারাবিকা ,২. রোবাস্টা।

কফির ভাল সুঘ্রাণ আসলে, নির্ভর করে এর মাটি ও আবহাওয়ার উপর। ব্রাজিল, নেদারল্যন্ড, কীউবা, নিকরাগুয়া ও পূর্বভারতের বিভিন্ন দ্বীপপুঞ্জে উৎপাদিত হয়ে থাকে এ কফি।

মাটি ও জলবায়ুঃ

কফি আর্দ্র ও উষ্ণ জলবায়ুতে ভালো জন্মে, ভাল ফলনের জন্য হালকা ছায়া যুক্ত আবহাওয়া প্রয়োজন। এছাড়াও পাহাড়ি ঢালু জমিতে এর চাষ ভালো হয়।

কফি চাষের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত ১৫০০-২২০০ মিলিমিটার হতে হবে। কিন্তু জল জমতে পারবেনা এমন জমি। সমতল জমিতেও এর চাষ সম্ভব।

 উর্বর দো-আঁশ বা বেলে দো-আঁশ মাটি এ চাষের জন্য সবথেকে ভালো। মাটিতে পি এইচ এর পরিমান ৬.১-৬.২  হতে হবে। লবনাক্ত মাটি এ গাছের জন্য ভালো নয়।

চারা রোপন পদ্ধতিঃ

কফি গাছের চারা এর বীজ থেকে হয়। আবার কলম থকে চারা তৈরি করা হয়। পরিপক্ক ভালোমানের বীজ থেকে চারা তৈরি করতে হয়। প্রথমে বীজ খোসামুক্ত করে , ভালোভাবে ধুয়ে ছাঁই বা কাঠের গুঁড়ো মিশিয়ে ৪-৫ দিন ছায়া যুক্ত স্থানে ছড়িয়ে রেখে তারপর বীজতলায় বপন করতে হয়।

বীজ বপনের ৩০-৪৫ দিনের মধ্যে চারা উঠে যায়, তারপর তা প্রতিস্থাপন করতে হয়। চারা রোপনের আগে গর্তে অল্প পরিমান জৈব সার ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করলে ভালো। চারা মে-জুন মাসে রোপন করতে হবে।

সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫-৭ মিটার আর গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৫-৭ ফিট হতে হবে। হেক্টর প্রতি সারের পরিমান- ৫০ কেজি নাইট্রোজেন, ৫০ কেজি ফসফরাস, ৫০ কেজি পটাস জমিতে দিয়ে নিতে হবে।

রোবাস্টার জাত হলে ২-২.৫ মিটার আর এ্যারাবিকা হলে ২.৫ – ৪ মিটার দূরত্বে চারা রোপোণ করতে হবে। এ গাছ যেনো ছায়া পায় পর্যাপ্ত, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে, ছায়া প্রদানের জন্য আমরা বড় কাঠ গাছ, বা সুপারি ও পেঁপে গাছও লাগাতে পারি। এতে করে কফি গাছের কোন প্রকার সমস্যা হবেনা।

সার প্রয়োগ ও রোগবালাই দমনঃ

কফি চাষে তেমন কোন সারের প্রয়োজন নেই। সেচ খুব কম লাগে তাই এর খরচ খুব কম। তবে রোবাস্টা জাতে সার কম লাগে। গাছে ফুল আসার আগে মার্চ মাসে ,আবার ফুল ফোঁটার পর মে মাসে এবং আগষ্ট ও অক্টোবর মাসের দিকে গাছে সার দিতে হয়।

গাছ প্রতি ২০ গ্রাম ইউরিয়া , ২০ গ্রাম পটাস, ১৫ গ্রাম টিএসপি প্রয়োগ করলে ফলন ভালো হয়। গাছের বৃদ্ধির সাথে সাথে এ সার প্রয়োগের, পরিমানও বেড়ে যাবে।

এছাড়া জৈব সার প্রয়োগ করা যেতে পারে। বাগানে জল নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থকতে হবে।

যদি কোন কারণে গাছের বৃদ্ধি কমে যায় তবে গাছে ফুল আসলে এবং ফল ধরার সময় ১০ লিটার জলে ২৫ গ্রাম ইউরিয়া, টিএসপি ২০ গ্রাম বং ১৮ গ্রাম পটাস মিশিয়ে গাছের পাতায় স্প্রে করলে গাছে ও বৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

এছাড়া বাগানের আগাছা পরিষ্কার রাখতে হবে। আর বাগানে যদি মালচিং পদ্ধতির মাধ্যমে ডাল-জাতীয় শস্য আবাদ করা যায় তাতে করে বাগানের বা জমির নাইট্রোজেনের পরিমান বেড়ে যাবে। এটা যে কোন চাষের জন্য ভালো দিক।

যদিও এ গাছ জল পছন্দ করে না তাপরও খেয়াল রাখতে হবে শুষ্ক মৌসুমে জল সেচের প্রয়োজন আছে কিনা। যদি কোন চারা মারা যায় তবে সেখানে নতুন চারা রোপন করতে হবে।

এ গাছে তেমন কোন রোগ বালাই নেই বললেই চলে। পোকার আক্রমনও কম হয়। তবে মিলিবাগ জাতীয় পোকা আক্রমন করে থাকে এ ধরনের পোকা গাছের কান্দ ছিদ্র করে থাকে।

এগুলো দমনের জন্য ম্যালাথিয়ন জাতীয় কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।

কফি গাছে সাধারণত যে রোগ দেখা যায় তা হল রাস্ট। এ রোগ দমনের জন্য ০.৫% বর্দো মিক্সার প্রয়োগ করতে হবে।

ফল সংগ্রহঃ

চারা রোপনের ৩ বছর থেকে ফল সংগ্রহ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। এ্যারাবিকা জাতে ৮-৯ মাস এবং রোবাস্টায় ১০-১১ মাস পর থেকে ফল সংগ্রহ করা যায়। ফল পেকে গেলে ১০-১৫ দিন পর পরও ফল সংগ্রহ করা যায়।

কফির বিন যেমন অনেক মূল্যবান তেমনি এর প্রসেসিং করার সময়ে যে পাউডার পাওয়া যায় তা আরও বেশি মূল্যবান। অতএব কফি চাষ সব দিক থেকেই লাভজনক একটি ফসল।

ইউরোপের বাজারেও ভারতীয় কফির চাহিদা অনেক। তাই আমরা বানিজ্যিক ভাবে কফির চাষ বাড়াতে পারি। কফি যে শুধু বাহিরে প্রসেসিং করা যায় তা নয়, এটি ঘরেও প্রসেসিং করা যায়।

আমরা বাড়ির আঙিনাতেও কফি গাছ লাগাতে পারি। এতে করে নিজেদের চাহিদা মিটবে আর বাড়তি যা থাকবে তা বিক্রিও করতে পারবো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top