পশ্চিমবঙ্গের আনন্দধারা প্রকল্প কি? এই যোজনায় কারা কারা সুবিধা পাবে? কিভাবে আবেদন ও রেজিস্ট্রেশান করতে হয়? জানুন সবকিছু। West Bengal Anandadhara Scheme in Bangla
গ্রামবাংলার ঐতিহ্য সংস্কৃতি কে ধরে রাখতে ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মহিলাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের উদ্দেশ্য আনন্দধারা প্রকল্প ও এই প্রকল্পের অধীনে উদ্ভাবন হয় সৃষ্টিশ্রী প্রকল্পের।
পঞ্চায়েত ও পল্লী উন্নয়ন (পিএন্ডআরডি) বিভাগ দ্বারা পরিচালিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পল্লী জীবিকা নির্বাহ মিশন (ডাব্লুবিএসআরএলএম) গ্রামীণ দরিদ্রদেরকে লাভজনক স্ব-কর্মসংস্থানের জন্য সংগঠিত করতে এবং সম্প্রদায়ের নারীদের আত্ম-গঠন এবং শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম করার পরিকল্পনা করে সহায়তা করার উদ্দেশ্যে এই যোজনা।এই প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নিম্নে প্রতিবেদনটি পড়ুন:
১. আনন্দধারা প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য:
- সার্বজনীন সামাজিক সামাজিক একত্রীকরণ, গরিবদের সংগঠন তৈরি , গরিবদের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি, সার্বজনীন আর্থিক অন্তর্ভুক্তি জীবিকা উন্নয়ন, উৎপাদনে ও বিপণনের র জন্য উপযুক্ত পরিকাঠামো ও প্রকল্পের জন্য নির্দিষ্ট সহায়ক কাঠামো বিভিন্ন স্তরে প্রস্তুত করা।
- কর্মসূচির প্রধান কৌশলগত পদক্ষেপ হ’ল সার্বজনীন সামাজিক গতিবদ্ধকরণ, এসএইচজিগুলি গঠন ও জোরদারকরণ।
- সক্ষমতা বৃদ্ধি, আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং অ্যাক্সেস, দক্ষতা বিকাশ এবং প্রযুক্তিগত বিকাশ পাশাপাশি বিপণন সহায়তার বিধান সহ বিভিন্ন জীবিকার বিকল্প গ্রহণ করা।
- সামাজিক জমায়েতে বাংলার প্রতিটি দরিদ্র পরিবারকে পৌঁছানোর জন্য ডাব্লুবিএসআরএলএম নিশ্চিত করে যে প্রতিটি যোগ্য পরিবার থেকে কমপক্ষে একজন যোগ্য মহিলা সদস্যকে কোনও এসএইচজি-র অংশ করা হয়েছে।
- রাজ্য সরকারের প্রথম অর্থবছরের (এফওয়াই) সময়কালে, যা ২০১২-১৩, নয়টি জেলার ৩২ টি ব্লকে এসএইচজি কর্মসূচির নিবিড়ভাবে বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। প্রতি স্বনির্ভর গোষ্ঠীকে ১৫০০০ টাকা করে রিভল্ভিং ফান্ড দেওয়া হয়।কমিউনিটি ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড সংঘকে অনুদান দেয়। গত বছর তমলুক ব্লক মহিলা বিকাশ ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি ও ঝাড়গ্রাম ব্লক অরণ্য সুন্দরী মহাসংঘ সেরা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সম্মান পায়।
- ভূমি ও ভূমি সংস্কার দপ্তরের সহযোগিতায় গরীব স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের জন্য লিগাল ল্যান্ড লিটারেসি চালু করেছে মালদা ও বীরভূমের আটটি ব্লক।
- এই মিশনের লক্ষ্য গ্রামীণ দরিদ্রদের দক্ষ ও কার্যকর প্রাতিষ্ঠানিক প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা, তাদের টেকসই জীবিকা বর্ধনের মাধ্যমে এবং আর্থিক ও সরকারী পরিষেবাগুলিতে উন্নত অ্যাক্সেসের মাধ্যমে তাদের পরিবারের আয় বৃদ্ধি করতে সক্ষম করা।
২.আনন্দধারা প্রকল্পের সুযোগ সুবিধা:
ক) আর্থিক সহায়তা প্রদান:
এই প্রকল্পের আওতায় থাকা ব্যক্তিদের বা গোষ্ঠীদের সরকার থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়।
- পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ আজীবিকা মিশন থেকে প্রত্যেক স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্যদের ১৫০০০ টাকা তহবিল হিসাবে প্রদান করা হয় যায়।
- এছাড়াও ৫০০০ টাকা করে লোন প্রদান করা হয়।
খ)ব্যাঙ্ক লোন প্রদান: এই প্রকল্পে ব্যাঙ্ক লোনের সহায়তা প্রদান করা হয়।
গ) প্রশিক্ষণ প্রদান:
দ্রব্য প্রস্তুত করে জীবিকা নির্বাহ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয় এই প্রকল্পে।
- মমতা সরকার দ্বারা আয়োজিত বিভিন্ন মেলা যেমন সবলা মেলা খাদ্য মেলার মতো জায়গায় গিয়ে নিজেদের কাজকে লোকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ দেয় এছাড়াও সেখান থেকে অর্থ উপার্জন করার একটি সুনির্দিষ্ট রাস্তা তৈরি হয়।
- এই প্রকল্পেরঅধীনে যেকোনো গ্রামীণ দরিদ্র মেয়েরা এই সুবিধা লাভ করতে পারে। তবে, তার আগে তাকে স্বনির্ভর গোষ্ঠীতে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে।
- প্রতিটি বাড়ির একজন সদস্য, একজন মহিলা, একটি এসএইচজি হিসাবে সংগঠিত হবে যা দরিদ্রদের অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়তে সহায়তা প্রদান করবে।
- এসসি / এসটি, সংখ্যালঘুদের, বিশেষত দুর্বল উপজাতি গোষ্ঠী, একক মহিলা এবং মহিলাদের নেতৃত্বাধীন গৃহস্থালি, প্রতিবন্ধী, ভূমিহীন, অভিবাসী শ্রম, বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠী এবং অস্থির অঞ্চলে বসবাসকারী সম্প্রদায়গুলি এই প্রকল্পের আওতায় এসে অর্থ উপার্জন করতে পারবেন।
৩.কীভাবে একটি স্বনির্ভর গোষ্ঠী গড়ে তুলবেন:
- এলাকার বিভিন্ন জায়গার মহিলাদের নিয়ে একটি বৈঠক গঠন করুন।
- সেখানে টাকা পয়সা আর্থিক লেনদেন নিয়ে আলোচনা করুন।
- নিজেদের মত করে টাকার তহবিল গঠন করুন।
- সেই তহবিলের হিসেব খাতায় লিপিবদ্ধ করুন।
- এরপরে ৬ মাস এই ভাবে চলার পর গ্রেড-১ পরীক্ষা হবে। পরীক্ষা করার জন্য ব্লকে স্বনির্ভর দলের মহিলা আধিকারিকের সঙ্গে দেখা করে বলতে হবে ও ব্যবস্থা করাতে হবে।
- গ্রেড-১ পরীক্ষায় পাশ করলে দল তার যত টাকা সঞ্চয় করেছে তত টাকা সরকারের কাছে রিভলভিং ফান্ড হিসাবে পাবে আর ব্যাঙ্কের কাছ থেকে সর্বোচ্চ তার চার গুণ নগদ ক্রেডিট বা ঋণ হিসাবে পাবে। এই ঋণ প্রয়োজনে তোলা যাবে।
৪. এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী বা দলের কাজ কীভাবে পরিচালিত হবে:
- এলাকার বিভিন্ন সামাজিক কাজকর্মে থাকতে হবে।
- গরীব ও বৃদ্ধ পরিববারের লোকেরা সময়মত সরকারের অর্থদান পাচ্ছে কিনা সেই সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হতে হবে।
- গ্রাম সংসদের মিটিংয়ে স্বনির্ভর দলের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন।
- এলাকার প্রতিটি শিশু (মেয়ে এবং ছেলে) লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে কিনা সে দিকে স্বনির্ভর দলের সদস্যরা লক্ষ রাখবেন এবং বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর উদ্যোগ নেবেন।
- গ্রামের অন্তরের সমস্যা গুলো তুলে আনা এবং সেই গুলো নিয়ে গ্রাম পঞ্চায়েতের সাথে মিটিং করা।
- মহিলাদের স্বনির্ভর করতে হস্তশিল্পে নিযুক্ত করা।
- বিভিন্ন হস্তাশিল্প প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের সাবলম্বী করে তোলা।
- পঞ্চায়েত গ্রামের যে সব উন্নয়নমূলক কাজে হাত দেবে তাতে স্বনির্ভর দলের সদস্যরা সক্রিয় ভাবে অংশ নেবেন।
৫.স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সঙ্ঘ ও উপসঙ্ঘ সম্পর্কে জানুন:
রাজ্য সরকারের মতে এই স্বনির্ভর গোষ্ঠী গুলো যেন নিজেদের কাজ নিজেরাই পরিচালনা করতে পারেন তাদের যাতে কোনো প্রতিষ্ঠানের সম্মুখীন না হতে হয় সেই লক্ষ্যে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মধ্যে দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
উপসঙ্ঘের কাজ:এই সংগঠনের মাধ্যমে গ্রাম পঞ্চায়েত সমিতির স্বনির্ভর গোষ্ঠী নিজেদের কাজ নিজেরাই পরিচালনা করতে পারেন তাই পদাধীকার গঠন করে এই উপসঙ্ঘ পরিচালনা করা হয়।প্রতি একবছর অন্তর পদাধীকারি প্রার্থী পরিবর্তন করা উচিত।
সঙ্ঘের কাজ:
সমস্ত উপসঙ্ঘ গুলিকে এক জায়গায় এনে যেই সমিতির অন্তর্ভুক্ত করা হয় তাকে বলা হয় সঙ্ঘ।এই সঙ্ঘের কাজ মহিলাদের রোজগার বাড়ানো, সামাজিক উন্নয়ন করা। সাধারণ পরিষদ ও পরিচালনা সমিতি গঠন করে এই কাজগুলো করা হয়।
৬. কীভাবে আবেদন করবেন আনন্দধারা প্রকল্পে:
পশ্চিমবঙ্গে সরকারের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট থেকে আপনি এই প্রকল্পে আবেদন করার তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন।
আনন্দধারা প্রকল্পের মধ্যে আনা হয়েছে সৃষ্টিশ্রী প্রকল্প,এই প্রকল্পের কাজ:
তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য ‘সৃষ্টিশ্রী উৎসব’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত প্রকল্প | Click Here |
কেন্দ্র সরকারের সমস্ত যোজনা | Click Here |
বাংলাভুমি হোম | Click Here |