“ লবঙ্গ ” সুগন্ধ-যুক্ত এ গাছটিকে আমরা মসলা জাতীয় গাছ হিসেবে চিনি। একে আমরা মসলার একটি প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেব জানি। কিন্তু এ লবঙ্গের ঔষধি গুনাগুন দারুণ।
লবঙ্গের আদি নিবাস হচ্ছে ইন্দোনেশিয়া, তবে বর্তমানে বিশ্বের জাঞ্জিরা, মাদাগাস্কার ও তাঞ্জানিয়াতেও চাষ হয় বানিজ্যিক ভাবে। আর দঃএশিয়াতে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকায় এর চাষ হচ্ছে। ভারতের তামিলনাড়ু, কর্নাটক, কেরেলা ও পাহাড়ি অঞ্চলে এর ব্যাপক চাষাবাদ শুরু হচ্ছে।
এ সুগন্ধি মসলাটি থেকে রুপ চর্চার বিভিন্ন উপাদান, ঔষধে, অ্যারোমা থেরাপি সহ বিভিন্ন ভেসজ খাতে এর ব্যাবহার হয়ে থাকে। এতে ভিটামিন রয়েছে যেমনঃ ক্যালসিয়াম, ফ্যাট, ফাইবার, সোডিয়াম এছাড়াও রয়েছে ভিটা-সি, ভীটা-এ ও জিংক।
লবঙ্গ আসলে, লবঙ্গ ফুলের কুঁড়ি শুকিয়ে করা হয়। ফুল ফোঁটার আগে একে গাছ থেকে পেরে শুকিয়ে তৈরি করা হয়।
আজ আমরা আপনাদের সাথে লবঙ্গ চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই লবঙ্গ চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।
মাটি ও জলবায়ুঃ
লবঙ্গ চাষের জন্য আর্দ্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় জলবায়ুর প্রয়োজন। দো-আঁশ মাটি, বেলে দো-আঁশ মাটি অথবা লাল মাটিতেও ভালো জন্মে।
এ গাছ সাধারণত পাহাড়ি এলাকায় ভালো হয়। মানে যেখানে বছরে ১৫০-৩০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয় কিন্তু জল জমে না এমন জায়গায়।
চারা তৈরিকরনঃ
লবঙ্গের ফল পেকে, বীজ থেকেই চারা হয়, বীজ বপনের আগে জমিতে কমপোস্ট বা জৈব সার দিতে হয়। অল্প কিছু রাসায়নিক সারও দেয়া যায়। তবে অনেক কৃষক রোপনের সময় সার না দিয়ে চারা রোপনের পরবর্তীতে সময়ে সার দিয়ে থাকেন, প্র্য়োজন মতো।
বীজ ছিটানোর ১৫-২০ দিন পর চারা অঙ্কুরিত হতে থাকে, তারপর ১৮-২৪ মাস বয়সের চারা প্রতিস্থাপনের জন্য উপযুক্ত হয়।
তবে মনে রাখতে হবে যেসব জায়গায় চারা রোপন করা হবে সে জায়গা যেন অতিরিক্ত সূর্যের আলো না পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারন এ গাছ অতিরিক্ত আলো পছন্দ করে না।
আলো ছায়া যুক্ত স্থান হতে হবে। আর যদি অতিরিক্ত আলো জাতীয় স্থান হয় তখন গাছের উপর গ্রীন নেট ব্যবহার করতে হবে। গাছের সহনশীল তাপমাত্রা হচ্ছে ২০ ডিগ্রী থেকে ৩০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেট হলে ভালো।
প্রজাতিঃ
এ গাছের তেমন কোন প্রজাতি নেই তবে চাষের ক্ষেত্রে Penang, Amboyna, Zanzibar জাতগুলো ব্যবহার করে থাকেন কৃষকরা।
রোপন পদ্ধতিঃ
গাছ থেকে বীজ পেকে গেলে তারপর তা সংগ্রহ করে বীজ বপনের মাধ্যমে চারা তৈরি করা হয়। কিন্তু গাছে তারাতারি ফলন চাইলে কলমের চারা ব্যবহার করতে হবে ।
কলমের চারায় মাতৃ গাছ ভালো থাকে এবং ফলন ভালো হয়, আবার গাছ দুর্বল হয় না। এ গাছ ১৫-২০ সেমি. উঁচু হয়। চারা রোপনের ক্ষেত্রে ১ মিটার প্রস্থ এবং সুবিধা মতো দৈর্ঘ্য নিয়েও চাষ করা যায়।
প্রতিটি চারা ৬-৭ মিটার ব্যবধানে রোপন কতে হবে। লবঙ্গএর চারা রোপনের উপোযোগী সময় হচ্ছে বর্ষা কাল।
সার প্রয়োগ পদ্ধতিঃ
গাছ থকে ৬-৭ মিটার দূরে সার দিতে হবে । এক্ষেত্রে কম্পোস্ট ৫০ কেজি, হাড়ের গুঁড়ো ২-৩ কেজি , আর অল্প পরিমান রাসায়নিক সার যেমনঃ ৪০ গ্রাম ইউরিয়া, ১১০ গ্রাম সুপার ফসফেট ও পটাস ছিটিয়ে দিতে হবে।
এ গাছে তেমন কোন রোগ বালাই হয় না, তবে যদি পোকার আক্রমন হয় তখন প্রয়োজন মতো কীটনাশক ছিটিয়ে দিতে হবে। গাছে ফুল আসলে তা ফোটার আগে কুঁড়ি সংগ্রহ করে রোদে শুকাতে হবে।
যেহেতু আমাদের দেশে এখন অল্প পরিমানে হলেও লবঙ্গ চাষ হছে, তাতে করে বোঝা যাচ্ছে এ দেশের আবহাওয়ায় এর বানিজ্যিক চাষ সম্ভব।
যেহেতু এটি একটি চাহিদাসম্পন্ন এবং বেশ মুল্যবান মসলা তাই আমাদের দেশের কৃষক যদি এর চাষাবাদ করেন তবে আর্থিক ভাবে বেশ লাভবান হবেন।
কৃষি নিয়ে আরো অনেক লেখা পেতে আমাদের সাইটের অন্য লেখাগুলো দেখুন। আমাদের লেখা গুলো ভালো লাগলে বা যেকোন মন্তব্য আমাদের ফেসবুক পাতায় লিখুন। আমরা আপনার মতামতের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিব।