পুজো মানেই সীমাহীন আনন্দ। বাড়ির সমস্ত সদস্যদের সাথে সাথে বাড়ির বয়স্করাও কিন্তু পুজোর আনন্দে মেতে ওঠেন। দাদু, ঠাকুমা, দাদু, দিদা, বড় জেঠু, বড় জেঠিমা, তাদেরও পূজার পোশাক দিন বদলের সাথে সাথে ফ্যাশনেবল হয়ে উঠছে। তবে যে কোন বয়স্ক আত্মীয়-স্বজনের জন্য পোশাক কেনার সময় মাথায় রাখতে হবে বিশেষ কিছু কথা। পোশাক শুধুমাত্র ফ্যাশন কিংবা স্টাইল নয়।
তার সাথে মানানসই এবং আরামদায়ক হতে হবে। যেহেতু বয়স্কদের জন্য পোশাক কিনছেন আপনি। যেমন ধরুন তরুণ-তরুণীরা যেমন পোশাক পরেন তেমন পোশাক বয়স্করা পড়তে পারেন না, নিশ্চয়ই নয়। তাই তাদের জন্য বিশেষভাবে পছন্দ করে কেনাকাটা করাটা জরুরী।
চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক উৎসবের দিনে বয়স্কদের কিছু পোশাক সম্পর্কে-
১) ধুতি-পাঞ্জাবি :
পাঞ্জাবি কিন্তু বয়স্কদের জন্য বেশ ভালো একটি পোশাক। যে কোনো উৎসবের সঙ্গে পূজা পার্বণের পড়তেে পারবেন অনায়াসেই। ঐতিহ্য বজায় রেখে রুচিসম্মত সুন্দর দেখতে বয়স্কদের পাঞ্জাবি উপহার দিতেই পারেন, অথবা কেনাকাটা করতে পারেন পুজোর জন্য।
ধুতি-পাঞ্জাবি তে বয়স্কদের বেশ মানায়়, তার সাথে পুজোর দিনে তো কথাই নেই। যতটা সম্ভব সুতির কিংবা তসরের পাঞ্জাবি, ধুতি পড়াটাই সবচেয়ে ভালো, কারণ আরামের বিষয়টাও খেয়াল রাখা জরুরী।
২) ফতুয়া :
বয়স্কদের জন্য ফতুয়া কিন্তু স্টাইলিশ লুক বজায় থাকার পাশাপাশি পুজোর দিনে বেশি বয়সীদের বেশ ভালোই লাগবে। তবে রঙের দিকটা বিশেষভাবে খেয়াল রাখাটা জরুরি। বেশি চড়া রং বাছাই না করাই ভালো।
হালকা রঙের উপর পছন্দ করতে পারেন আপনার শ্রদ্ধেয় বয়স্ক গুরুজনদের পুজোর পোশাক। যেসব পোশাকগুলিতে অফ হোয়াইট, সাদা, ধূসর, তার সাথে অফ টনের রং এর পাশাপাশি উৎসবের রং হিসেবে লাল-সাদা, হলুদ, কমলা, মেজেন্ডা, প্রভৃতি রং এর পোশাক বাছাই করতে পারেন।
৩) শাড়ি :
বয়স্করা সাধারণত শাড়িটাই বেশি পরে থাকেন। সেই কারণে উৎসবের দিনে শাড়িটা বাছাই করুন তার পছন্দের এবং তার পছন্দের রং এর। তসর, হ্যান্ডলুম, তাঁঁত, জামদানি ইত্যাদি শাড়ি রাখতে পারেন, বাড়ির সবচেয়ে বড় সদস্যের জন্য। সেক্ষেত্রে কিন্তু রংটাও খেয়াল রাখবেন।
হালকা রংয়ের শাড়ি যেন হয়ে থাকে। তাতে উৎসবের আমেজ বজায় থাকার পাশাপাশি রুচিশীল এবং নিজেকে মানানসই হিসেবে সাজিয়ে তুলতে যেন কোন অসুবিধা না হয়।
তার সাথে হালকা সুতোর কাজ করা গ্লাস হাতা হোক অথবা শর্ট হাতা ব্লাউজ বেশ মানানসই। অনেকে আবার থ্রি-কোয়ার্টার ও ফুলহাতা পরতে পছন্দ করেন।
৪) উত্তরীয়় :
উৎসবের দিনে বিশেষ করে দুর্গাপূজার সময় উত্তরীয় ব্যবহার করে থাকেন অনেক বয়স্করা। তাই পছন্দমত উত্তরীয় ব্যবহার করতে পারেন উৎসবের দিন গুলিতে।
৫) সাধারণ ডিজাইনের পোশাক :
উৎসবের দিন হোক অথবা দৈনন্দিন জীবন, সবক্ষেত্রে কিন্তু বয়স্কদের জন্য জামা কাপড় কেনার ক্ষেত্রে ডিজাইনের দিকটা খেয়াল রাখতে হয়। বয়স্করা ভারী এবং জাঁকজমকপূর্ণ পোশাকের পরিবর্তে হালকা এবং সাধারন ডিজাইনের পোশাক পরতে বেশি পছন্দ করেন।
ঢিলেঢালা ও হালকা পোশাক শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে। তাই তাদের শরীরের অবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্য পোশাকের এই বিষয়গুলি খেয়াল রাখা ভালো।
৬) ঝামেলামুক্ত পোশাক :
বয়স্কদের ক্ষেত্রে ছোট চেন, বোতাম ও হুকযুক্ত পোশাক ব্যবহার না করাই ভালো। অনেক বয়স্ক ব্যক্তি এই ধরনের পোশাক পরতে বেশ ঝামেলায় পড়েন। এর বদলে সহজে পরাও যাবে এবং খোলাও যাবে তেমন পোশাক বাছাই করা ভালো।
৭) জুতো :
বেশি বয়সী দের জন্য জুতো বাছাই করার ক্ষেত্রে কিন্তু বিশেষ ধ্যান রাখাটা জরুরি। হাঁটাচলার সুবিধা থেকে জুতোতে যেন নিরাপত্তা থাকে। এক্ষেত্রে হাঁটাচলার সুবিধাযুক্ত জুতো গ্রহণ করতে হবে এবং একটু উঁচু হিল জুতো জুতো বাদ দিতে হবে।
বিশেষ করে জুতোর তলা টাও ভালোভাবে দেখে নেওয়া টা জরুরী। জুতোর তলা যেন পিচ্ছিল না হয়, কাঁটাযুক্ত হলে বেশ ভাল হাঁটা চলার ক্ষেত্রে। তার সাথে সাথে পায়ের জন্য যেন আরামদায়ক এবং নরম অনুভব হতে পারে।
৮) বিশেষ ধরনের পোশাক :
সব দিক মাথায় রেখে দিন বদলের সাথে সাথে বয়স্কদের পোশাকেও এসেছে নতুনত্ব এবং সুবিধা। এগুলো প্রয়োজনমতো সহজেই খোলা এবং লাগানো যায়।
এই পোশাকগুলো অনেক সুবিধা থাকলেও স্টাইলের দিক থেকে কিন্তু কম যায় না। তাই বয়স্ক দের পোশাক কেনার সময় এসব পোশাকের খোঁজ করলেই পেয়ে যেতে পারেন আপনি আপনার বাড়ির বয়স্ক সদস্যদের পছন্দের পোশাক।
৯) শাল :
দুর্গাপুজো কাটার পর পরই ঠাণ্ডা আমেজ পড়তে শুরু করবে, সে ক্ষেত্রে পূজার পোশাকের সাথে শালটাও কিন্তু বেশ মানানসই। তাই উপহার হিসেবে এটাও দিতেই পারেন।
১০) পাজামা পাঞ্জাবী :
ধুতি পাঞ্জাবির মতো পাজামা-পাঞ্জাবি ও বয়স্করা পরতে পারেন অনায়াসেই। সুন্দর ডিজাইনের সুতোর কাজ করা পাঞ্জাবির সাথে সাদামাটা পাজামা পরলে উৎসবের দিনে বেশ লাগবে। সবার মাঝে বয়স্করা হয়ে উঠবেন ফ্যাশন আইকন, কি বলেন?
১১) ওড়না :
পাঞ্জাবির সাথে এক কাঁধে ভাঁজ করা ওড়না ফেলার মাধ্যমে ঐতিহ্য যেমন বজায় থাকে, তেমনি বয়স্ক দাদু, জেঠু দের বেশ একটা ভারী লুক বজায় থাকে। সেটাও পোশাকের সাথে নিতে ভুলবেন না যেন। পোশাকের রং উৎসবের রং হোক, তবে সেটা যেন হালকা রংয়ের হয়।
১২) কোট :
পাঞ্জাবির সাথে হাফ কোটও পরা যেতে পারে বয়স্কদের। ট্রেন্ডি লুক বজায় থাকার পাশাপাশি কমফর্টেবলও।
১৩) এক্সেসরিজ :
বয়স্ক মহিলাদের জন্য হতে পারে সুন্দর কোন দরকারী ব্যাগ, হালকা গয়়না, আঁচলচাবি, ইত্যাদি। বয়স্ক পুরুষদের জন্য হতে পারে হাতের ঘড়ি, পাঞ্জাবির বোতাম, সুন্দর কোন সাদা ফ্রেমের চশমা, ইত্যাদি।
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য অন্যতম ধর্মীয় উৎসব হলো দুর্গোৎসব। এই উৎসবের দিনে বাচ্চা থেকে বুড়ো সবাই নতুন সাজে সেজে ওঠতে পছন্দ করেন। বাচ্চা থেকে তরুণ-তরুণী এবং বয়স্করাও ভিন্ন ভিন্ন সাজে নিজেদের উৎসবের দিনে আরও বেশি আকর্ষণীয় করে তোলেন।