লঙ্কা একটি মসলা জাতীয় ফসল। এটি ঝাল জাতীয় একটি ফসল। তরকারিতে স্বাদ বৃদ্ধিতে লঙ্কা ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি একটি জনপ্রিয় মসলা। বাজারে এর চাহিদা ও ভালো। কিছু লঙ্কা এর ঝাল বেশি হয়ে থাকে আবার কিছু লঙ্কা এর ঝাল কম থাকে। কামরাঙ্গা লঙ্কা, কালো লঙ্কা এগুলোর ঝাল একটু বেশি হয়ে থাকে।
আজ আমরা আপনাদের সাথে লঙ্কা চাষের পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব। এতে করে আপনারা সহজেই লঙ্কা চাষের বিস্তারিত জানতে পারবেন।
আমরা নিয়মিত আপনাদের সাথে নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। এর ফলে আপনারা কৃষি জমি, শিক্ষা, অর্থনীতি এসব বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে থাকেন। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রয়োজনে আপনারা এ সকল তথ্য থেকে উপকৃত হয়ে থাকেন।
মাটি ও জলবায়ুঃ
লঙ্কা সাধারনত উর্বর দোআঁশ মাটিতে ভালো হয়ে থাকে। প্রায় সব ধরনের মাটিতেই লঙ্কা ভালো জন্মে। তবে মাটিতে জল নিকাশের ভালো ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং আলো ও বাতাস পূর্ণ হতে হবে।
মাটি কিছুটা ক্ষারীয় হতে হবে। অধিক বৃষ্টিপাত এ গাছের জন্য উপযোগী নয়। গাছে ফুল ধরার সময় তাপমাত্রা ৩৫-৪৫ ডিগ্রী সে হলে ভালো হয়।
-
যে কোন লোনের জন্য আবেদন করুন অনলাইনে 👇
₹ হোম লোন • ₹ পার্সোনাল লোন • ₹ বাইক লোন • ₹ কার লোন • ₹ বিজনেস লোন • ₹ শিক্ষা লোন -
মিষ্টি আলু চাষের সঠিক ও সহজ পদ্ধতি
-
-
-
-
চারা তৈরিঃ
উন্নতমানের চারা তৈরির জন্য প্রথমে বীজতলায় চারা উৎপাদন করতে হবে। তারপর সেই চারা অন্যত্র স্থানান্তর করতে হবে।
বীজতলা তৈরি করতে হবে জমির দৈর্ঘ্য অনুযায়ী। জমি দৈর্ঘ্য হবে বীজতলার দৈর্ঘ্য, প্রস্থ হবে ১ মিটার, উচ্চতা হবে ৪০ সেমি।
জমি তৈরিঃ
জমি ভালো ভাবে চাষ দিয়ে তৈরি করে নিতে হবে। মাটির ধরন অনুযায়ী ৪-৬ টি চাষ দিতে হবে। চাষ গভীর ভাবে দিতে হবে।
বীজতলা তৈরির সময় বীজতলার মাটিতে বালি ও সার মিশিয়ে নিতে হবে। পরিমান মতো গোবর সার মিশিয়ে মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে।
বীজের পরিমানঃ
জমির আকার অনুযায়ী বীজের পরিমান নিভ©র করে। সাধারনত এক বিঘা জমির জন্য ১২০-১৩০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন হতে পারে।
বীজতলা জীবাণুমুক্ত করণ ঃ
বীজ বপন করার আগে বীজতলা শোধন করে নিতে হবে। সূর্যের তাপে বীজতলা শুকিয়ে শোধন করে নিতে হবে। তারপর বীজতলা ভালোভাবে কুপিয়ে নিতে হবে্ এবং মাটি সমতল করে নিতে হবে।
মাটির উপর সাদা পলিথিন সিট দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। এই অবস্থায় ২-৩ সপ্তাহ রেখে দিতে হবে যেন সূর্যের আলো সরাসরি পলিথিন এর উপর পড়ে।
এই তাপে বীজতলার মাটি গরম হবে এবং তার ফলে ভেতরে যে ক্ষতিকারক জীবানু থাকবে সেগুলো মারা যাবে। তাপ বৃদ্ধির জন্য ভিতরের বিষাক্ত এমোনিয়া গ্যাস ও বের হয়ে যাবে।
ফলে জীবানু মারা যাবে। এভাবে বীজতলা শোধন করে নিতে হবে। পরে কোদাল দিয়ে মাটি হালকা কুপিয়ে দিলে বিষাক্ত গ্যাস বের হয়ে যাবে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে এ পদ্ধতিতে বীজতলা শোধন করার সময় মাটি থেকে নাইট্রোজেন সার দূর হয়ে যেতে পারে তাই তখন মাটিতে নাইট্রোজেন সারের অভাব দেখা যায়।
বীজ শোধন ও জলে ভিজানোঃ
বীজ বপন করার আগে বীজ শোধন করে নিতে হবে তাহলে বীজ থেকে গজানো চারা উন্নতমানের হবে। এই জন্য বীজ কে ৪৮ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
রোগ বিহীন ও উন্নত চারা উৎপাদন করার জন্য প্রোভেক্স বা ক্যাপটান দ্বারা বীজ শোধন করে নিতে হবে বীজ বপনের ৬ ঘন্টা আগে।
চারা রোপনঃ
জমি ভালোভাবে চাষ দেওয়ার পর চারা রোপন করতে হবে। চারা সারিতে রোপন করতে হবে। এক সারি থেকে আরেক সারির দূরত্ব হবে ৬০-৭০ সেমি।
একটি চারা থেকে আরেকটি চারার দূরত্ব হবে ৩০-৪০ সেমি। চারা রোপন করার উপযুক্ত সময় হলো বিকাল বেলা।
সার প্রয়োগঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে ভালো ভাবে সার প্রয়োগ করতে হবে।
বিঘা প্রতি জৈব সার দিতে হবে ১২০০-১৩০০ কেজি, টিএসপি দিতে হবে ৪০ কেজি,
এমওপি দিতে হবে ৬ কেজি, জিপসাম দিতে হবে ১৫ কেজি। সার প্রয়োগের পর সার ভালো ভাবে মাটিতে মিশিয়ে দিতে হবে।
জমিতে চারা রোপন করার ২৫,৫০ ও ৭০ দিন পর ইউরিয়া সার ও এমওপি সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে। সার প্রয়োগ করার পর প্রয়োজনে জল সেচ দিতে হবে।
আগাছা দমনঃ
জমিতে যেন আগাছা না জন্মে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আগাছা গাছের বৃদ্ধি হ্রাস করে থাকে। গাছের পুষ্টিতে ভাগ বসায়। কোদাল দিয়ে কুপিয়ে মাটি আলগা করে দেয়া ভালো।
সেচ প্রয়োগঃ
উন্নত ফলন পেতে হলে জমিতে প্রয়োজনীয় জল সেচ দিতে হবে। শুকনা মৌসুমে ৪-৫ দিন পরপর সেচ প্রয়োগ করতে হবে।
সেচ প্রয়োগের কিছুদিন পর প্রয়োজনে মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে যেন শিকড় প্রয়োজন মতো আলো ও বাতাস পায়। তবে জমিতে যেন অতিরিক্ত জল জমে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
প্রয়োজনে নালা তৈরি করে দিতে হবে যেন অতিরিক্ত জল বের হয়ে যায়।
পোকা ও রোগ দমন ব্যবস্থাপনাঃ
লঙ্কা গাছে সাধারনত সাদা মাছি, থ্রিপস পোকা, জাব পোকা, মাকড় ইত্যাদি পোকা আক্রমন করে থাকে।
পোকা আক্রমন করে থাকলে প্রয়োজনীয় বালাই নাশক ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া ও গাছে যদি রোগ দেখা যায় তাহলে প্রয়োজনীয় ছত্রাকনাশক স্প্রে করতে হবে।
সংগ্রহঃ
লঙ্কা গাছে ফুল আসার ১৫-২০ দিনের মধ্যেই লঙ্কা তোলা যাবে। কাচা অবস্থায় লঙ্কা তোলা হয়ে থাকে।
তবে যদি সংরক্ষণ এর জন্য হয় তবে লঙ্কা এর রং লাল হলে তুলে রোদে শুকাতে হবে।
ফলনঃ
কাচা লঙ্কা প্রতি হেক্টরে ফলন হবে প্রায় ১০-১১ টন এবং শুকনা লঙ্কা হবে প্রায় ১.৫-২ টন।