2023 ভাই ফোঁটা: 2023 Bhai Phonta History & Significance, 2023 ভাই ফোঁটার ইতিহাস ও তাৎপর্য এবং জানুন ভাই ফোঁটা কেন পালন করা হয়? বিধি কি? কিভাবে শুরু হয় ভাই ফোঁটা
ভাই বোনের বন্ধন উৎসব হলো ভাইফোঁটা (Bhai Phonta)। তবে দেশে ও রাজ্য ভেদে ভাই ফোঁটাকে বিভিন্ন নামে ডাকা হয়।
যেমন ধরে নিন আমাদের পশ্চিমবঙ্গের উত্তরবঙ্গ সহ প্রতিবেশী রাজ্য সিকিম এবং নেপালের মতো হিন্দু দেশে ভাইফোটা কে ভাই টিকা, ভাই দুজ বলা হয়, কিন্তু ভাইফোঁটার কেন পালন করা হয়!
ভাইয়ের হাতে রাখি পরিয়ে ভাই-বোনের উৎসব রাখি পূর্ণিমা পালন করা হয়। আমাদের পশ্চিমবঙ্গে রাখি বন্ধন এর তুলনায় ভাইফোটাকে ভাই-বোনের বিশেষ উৎসবের, বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে।
ভাইফোঁটার ইতিহাস 2023:
হিন্দু ধর্ম অনুসারে পুরাণের কাহিনীতে শ্রীকৃষ্ণ ও সুভদ্রার ভাইফোঁটার কাহিনীর বিবরণ পাওয়া যায় তবে যমি ও যমের ভাইফোঁটা নিয়ে অনেক মতবাদ দেখতে পাওয়া যায়।
চলুন জেনে নেওয়া যাক ভাইফোঁটার ইতিহাস সম্পর্কে:
জগদ্ধাত্রী পূজার ইতিহাস কি? কেন শুরু হয় এই পুজা? জানেন কি?
শ্রীকৃষ্ণ ও সুভদ্রার ভাইফোঁটা:
পুরাণের কাহিনী অনুসারে শ্রীকৃষ্ণের নরকাসুর নামের একটি রাক্ষস কে বধ করার পর কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়ার দিন দ্বারিকা নগরীতে ফিরে এসেছেন।
শ্রীকৃষ্ণের অতি প্রিয় ছিল তার বোন সুভদ্রা, দাদা নরকাসুর বধ এর খবর পেয়ে বিজয় উৎসবের স্বাগত জানানোর জন্য সুভদ্রা শ্রীকৃষ্ণের জন্য মঙ্গল ডালি সাজিয়ে নিয়ে আসেন।
শ্রীকৃষ্ণকে তিলকের ফোটা পরিয়ে দ্বারিকা নগরীতে স্বাগত জানায়। শ্রীকৃষ্ণ এবং সুভদ্রার অকৃত্রিম ভালোবাসা ও ভাই বোনের ভালবাসাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে কার্তিক মাসের শুক্লপক্ষের দ্বিতীয়া দিনটিকে হিন্দু ধর্মাবলম্বী মানুষেরা ভাই বোনের মেল বন্ধন উৎসব হিসেবে পালন করে।
2023 ভাই ফোঁটার শুভেচ্ছা বার্তা ও স্ট্যাটাস ছবি
যম ও যমীর ভাই ফোঁটা:
ঋকবেদে যমি এবং যমের বিবরণ দেখতে পাওয়া যায়। ঋকবেদের কাহিনী অনুসারে সূর্যের যমজ পুত্র কন্যা এবং যমি ও যম হলো পৃথিবীর প্রথম নারী ও পুরুষ। কিন্তু ঘটনাচক্রে যমের প্রথমে মৃত্যু হলে যম দেবতাদের আদেশে মৃত্যু লোকের মৃত্যুর দূত হিসেবে যমপুরী নরকের রাজা হিসেবে নিযুক্ত হন যম।
কিন্তু অনেকদিন ধরে দাদার সঙ্গে যমি অর্থাৎ যমুনার দেখা সাক্ষাৎ না হওয়ায় যমকে যমুনা মর্তলোকে আসার জন্য আমন্ত্রণ দেন।
যমুনার এই ইচ্ছে পূরণ করার জন্য যমুনার কাছে আমন্ত্রণ পেয়ে যম বোনের বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ভাই কে অনেকদিন পর কাছে পেয়ে যমুনা তার ভাইয়ের জন্য মিষ্টি, লুচি, পায়েস, ইত্যাদি সহ বিভিন্ন রকমের পদের আয়োজন করেন।
তারপর যমলোকে যাবার বেলা যমুনা যমকে ফোঁটা পরিয়ে দেয়, যম তখন খুশি হয় বোন যমুনাকে প্রতিবছর ওই দিন অর্থাৎ কার্তিক মাসের দ্বিতীয় দিনে যমুনার কাছে ভাইফোঁটা নিতে আসার প্রতিশ্রুতি দেন।
সেই থেকে রীতি মেনে পৃথিবীতে প্রতিবছর কার্তিক মাসের দ্বিতীয়ার দিন ভাইবোনের পবিত্র উৎসব ভাইফোঁটা (Bhai Phonta) পালন করা হয়। তাই এই ভাইফোঁটার আরেক নাম ভাতৃদ্বিতীয়াও (Bhatridwitiya) বটে।
ভাই ফোটার তাৎপর্য অথবা ভাইফোঁটা কেন পালন করা হয়:
কাহিনী অনুসারে শ্রীকৃষ্ণ ও সুভদ্রা এবং যমুনা ও যম এর কাহিনী অনুকরণে পৃথিবীবাসী হিন্দু ধর্মের মানুষেরা ভাই-বোন এদের বন্ধন এর পবিত্র উৎসব ভাইফোঁটা পালন করে।
তবে শ্রীকৃষ্ণ ও সুভদ্রার তুলনায় যম ও যমুনার তুলনামূলকভাবে বেশি গুরুত্ব পাওয়া যায়, ও যমুনার ভাইফোঁটার কাহিনীতে যমুনাকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুসারে প্রতি বছর কার্তিক মাসের দ্বিতীয় দিন অর্থাৎ ভাতৃদ্বিতীয়ার দিন যমুনার কাছ থেকে ভাইফোঁটা নেওয়ার জন্য যম যমুনার বাড়িতে আসেন।
তাছাড়া যম পুরীর মৃত্যুর দেবতা তিনি পৃথিবী থেকে জীবের প্রাণ হরণ করে নিয়ে যান। তাই ভাতৃদ্বিতীয়ার দিন বোনেরা ভাইদের কপালে ভাইফোঁটা (Bhai Phonta) দিয়ে ভাই ফোটার মন্ত্র পড়ে এই বলে যে,
ভাইয়ের কপালে দিলাম ফোঁটা, যমের দুয়ারে পড়ল কাঁটা।
যমুনা দেয় যমকে ফোঁটা, আমি দিই আমার ভাইকে ফোঁটা॥
যমুনার হাতে ফোঁটা খেয়ে যম হল অমর।
আমার হাতে ফোঁটা খেয়ে আমার ভাই হোক অমর॥
ভাইফোঁটার মধ্যে তাৎপর্য এইযে ভাইফোঁটার দিন যম যমুনার বাড়ি ভাইফোঁটা নিতে আসে। তখন পৃথিবীতে বসবাসকারী বোনেরা তাদের ভাইদের মঙ্গলকামনায় যমের দুয়ারে কাঁটা দিয়ে দেয়। যাতে করে যমরাজ যমলোকে জীবকুল থেকে ভাইদের প্রাণ হরণ করে নিয়ে যেতে না পারে।
এভাবেই বহুদিন ধরে বোনেরা তাদের দাদা ও ভাইদের মঙ্গলকামনায় ভাতৃদ্বিতীয়ার দিন যম দুয়ারে কাঁটা বিছিয়ে ভাইদের প্রান নিয়ে যেতে না পারে তার জন্য যম দুয়ারে যমপুরীর প্রবেশ দ্বার বন্ধ করে দেয়।
ভাইফোঁটা কেমন করে দেয়:
ভাইফোঁটা (Bhai Phonta) হলো এমন একটি ঘরোয়া উৎসব, যে উৎসবে বোনেরা তাদের ছোট ভাইদের এবং বড় দাদাদের কপালে ফোঁটা দিয়ে তাদের মঙ্গলের জন্য মঙ্গল টিকা পরিয়ে দেয়। ভাইফোঁটার দিন সকাল থেকেই ভাই ও বোন দু’জনই উপবাসে থাকে।
দিদি ও বোনেরা সকাল-সকাল শিশির ধরার জন্য কাপড় দিয়ে শিশির ভেজা ঘাস থেকে শিশির জোগাড় করে। এই শিশির দিয়েই ভাইদের জন্য রক্ত চন্দন ঘষা হয়। এরপর বোনেরা স্নান সেরে ভাইফোঁটার উপকরণগুলোর জোগাড় করতে লেগে যায়।
বিভিন্ন রকমের ফুল, ধান, দুর্বা ঘাস, তিলক, শঙ্খ, প্রদীপ, এগুলি সাধারণত লাগে। তারপর থালা সাজিয়ে বাটি ভরে পায়েস, মিষ্টি, ভাইফোঁটার মিষ্টি লুচি, নারিকেল, ইত্যাদি খুব যত্ন সহকারে তৈরি করে ভাইদের হাতে বোনেদের তুলে দিতে হয়।
ভাইদের মাথায় বাম হাতে করে তিনবার ধান-দর্বা তুলে দেয় তারপর বাম হাতের কড়ে আঙ্গুল দিয়ে ভাইদের কপালে তিনবার ভাই ফোটার মন্ত্র পড়ে ভাইফোঁটা দেওয়া হয়।
ভাইফোঁটা হয়ে গেলে যদি কোনো উপহার দেওয়ার থাকে তাহলে সেই উপহার বিনিময় করে দেয় ভাই-বোন।
ভাইফোঁটা বাম হাতের কড়ে আঙ্গুল দিয়ে কেন দেওয়া হয়:
সনাতন ধর্ম অনুসারে মানুষের হাতের পাঁচটি আঙুল কে পঞ্চভূতের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যেমন ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ, এবং বোম। এখানে বোম অর্থাৎ হাতের কড়ে আঙ্গুল হলো মহাশূন্যের প্রতীক।
শাস্ত্রমতে ভাই বোনের ভালোবাসা হলো মহাশূন্যের মত বিশাল এবং অসীম। বোনেরা তাদের দাদা ও ভাইদের বাম হাতের কড়ে আংগুল দিয়েই ভাইফোঁটা দেয়।
ভাই বোনের সম্পর্ক এক অসীম পবিত্র সম্পর্ক, সে ভাইফোঁটা হোক বা না হোক। পৃথিবীর সব বোনেরা ভাইদের মঙ্গল কামনা করে থাকে। তাছাড়া কোনো উৎসব অনুষ্ঠানে ভাই, বোন দের এবং বোন ভাইদের উপহার বিনিময় এর মধ্যে দিয়ে, হৈ-হুল্লোড় আনন্দ উৎসব চলে সর্বক্ষণ।
ভাইবোনে তে যতই ঝগড়া ঝামেলা চলুক না কেন, দিদি কিংবা বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর সব থেকে বেশি কষ্ট হয়ত ভাইরাই পায়। তবে ভাইফোঁটা হিন্দু সংস্কৃতির এমন একটি উৎসব, এ উৎসবে ভাইবোনদের মধ্যে একটি মধুর আবেগকে জাগিয়ে তোলে।
তাইতো সকল ভাইবোনেরা শুধুমাত্র ভাতৃদ্বিতীয়ার দিনে বোনদের কাছে ভাইফোঁটা নেওয়ার জন্য মাইলের পর মাইল পথ অতিক্রম করে ভাইফোঁটা নিতে ছুটে যায় তাই না!